ভালোবাসি তোমায়

হুর ভেবেছিল ফারানের কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করলেই সব সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু ক্যান্টিনের সেই অপমানজনক প্রত্যাখ্যান ছিল কেবলই শুরু। ভার্সিটির গেটে মুহিবের হয়রানির পর সে একা হয়ে গেলেও, কেউ একজন দূর থেকে সবকিছু দেখছিল—যার চোখে ছিল প্রতিশোধের আগুন। কে এই অদৃশ্য রক্ষক, আর তার ক্রোধের শিকার কে হতে চলেছে?

ফারানের প্রত্যাখ্যানের পর হুর যখন নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে, তখন শহরের এক অন্ধকার ঘরে চলছে এক নৃশংস প্রতিশোধের খেলা। মুহিব তার অপরাধের শাস্তি পেলেও, এই ভয়ংকর বিচারক কে, যে নিজেকে হুরের রক্ষাকর্তা মনে করে? তার এই হিংস্রতার শেষ কোথায়?

গভীর রাতে হুরের ঘুমের মাঝে এক অচেনা অতিথি এসে তার কপালে এঁকে দিয়ে যায় স্নেহের চিহ্ন আর প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা। পরদিন ভার্সিটিতে মুহিবের নৃশংস লাশ দেখে হুর যখন জ্ঞান হারায়, তখন তাকে আগলে ধরে একজোড়া পরিচিত হাত। যে রাতে গোপনে আসে, আর যে দিনে পর, তারা কি একই মানুষ?

মায়ের বকুনি আর বাবার স্নেহে হুরের দিনটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও, চৌধুরী বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মুহিবের বাবা যখন তার ছেলের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে খুনিকে টুকরো টুকরো করার শপথ নিচ্ছে, তখন সে কি জানে তার আসল শত্রু কে? এই প্রতিশোধের আগুন আর কাকে কাকে পোড়াবে?

ফারান চিরদিনের জন্য ভার্সিটি ছেড়ে চলে গেছে শুনে হুরের পৃথিবীটা যেন ভেঙে পড়ে। যে কালো বর্ণের ছেলেটির চোখের গভীরতায় সে নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিল, তার হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়াটা কি শুধুই এক কাকতালীয় ঘটনা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কোনো উদ্দেশ্য? হুর কি পারবে এই শূন্যতা মেনে নিতে?

ফারানকে এক ঝলক দেখার জন্য হুরের প্রতিটি দিন ছিল অধীর অপেক্ষায় ভরা। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার পথের দিকে চেয়ে থাকা, বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও ভালোবাসার কথা বলা—এই সবকিছুই কি অর্থহীন ছিল? যে মানুষটা তার জীবন থেকে নিঃশব্দে চলে গেল, সে কি সত্যিই হুরের এই পাগলামি টের পায়নি?

ফারানের স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল হুর, ঠিক তখনই তার বাড়িতে হাজির হয় সুদর্শন ফাইয়াজ। প্রথম দেখাতেই তার সাথে হুরের খুনসুটি শুরু হলেও, ফাইয়াজের চোখের অদ্ভুত চাহনি হুরের মনে এক নতুন সন্দেহের জন্ম দেয়। এই নতুন মানুষটির আগমন কি কেবলই এক কাকতালীয় ঘটনা, নাকি কোনো পুরোনো রহস্যের নতুন অধ্যায়?

ফাইয়াজকে নিয়ে হুরের বিরক্তি যখন চরমে, তখনই সে জানতে পারে ফাইয়াজ তাদের বাড়িতেই এক মাসের জন্য থাকতে আসছে। সবার সাথে হাসিখুশি থাকা এই ছেলেটা শুধু হুরের সাথেই অদ্ভুত আচরণ করে কেন? তার এই খামখেয়ালিপনার আড়ালে কি কোনো গোপন উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে?

ফাইয়াজকে অপদস্থ করার জন্য তার ওয়াশরুমের সামনে তেল ফেলে আসে হুর, কিন্তু তার পাতা ফাঁদে সে নিজেই পড়তে যাচ্ছিল। ফাইয়াজ তাকে বাঁচিয়ে দিলেও দুজনের মধ্যে তৈরি হয় এক অদ্ভুত অস্বস্তিকর মুহূর্ত। এই খুনসুটি আর উত্তেজনার খেলা কি তাদের সম্পর্কের কোনো নতুন দিকের ইঙ্গিত দিচ্ছে?

ফাইয়াজের বাড়িতে কাটানো দিনটা খুনসুটিতে ভরা থাকলেও, রাতের অন্ধকারে হুরের ঘরে আবারও হানা দেয় সেই রহস্যময় ছায়ামূর্তি। তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে থাকে হুরের জন্য তীব্র ভালোবাসা আর এক ভয়ংকর বিপদের আভাস। কে এই মানুষটি, যে হুরের এতটা কাছে থেকেও নিজেকে আড়ালে রেখেছে?

ফাইয়াজ এখন হুরের বাড়ির নতুন অতিথি। ছাদে অসাবধানতায় হুরের পায়ে গরম কফি পড়ে গেলে, তাকে বাঁচাতে ছুটে আসে ফাইয়াজ। তার চোখেমুখে ফুটে ওঠা তীব্র অস্থিরতা আর যত্ন কি শুধুই সৌজন্যতা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর অনুভূতি যা সে প্রকাশ করতে চায় না?

রাস্তা পার হতে গিয়ে এক ভয়ংকর বিপদের মুখে পড়ে হুর, যখন একটি গাড়ি তীব্র গতিতে তার দিকে ছুটে আসে। ঠিক শেষ মুহূর্তে ফাইয়াজ তাকে বাঁচিয়ে নিলেও, তার কঠোর আচরণ আর তিরস্কার হুরের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়। এই আক্রমণ কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?

গভীর রাতে হুরের রুমে প্রবেশ করে সেই রহস্যময় অতিথি, এবার তার স্পর্ধার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তার ঠোঁটে এঁকে দেওয়া চুম্বনে ভালোবাসার চেয়ে বেশি ছিল অধিকার আর শাস্তির ইঙ্গিত। পরদিন সকালে ফাইয়াজের করা অপমান কি রাতের সেই ঘটনার সাথে কোনোভাবে যুক্ত?

হুরকে অপমান করার পর ফাইয়াজ যখন একের পর এক সারপ্রাইজ দিয়ে তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে, তখন হুরও তার সাথে অভিমানের খেলা চালিয়ে যায়। ফুলের বাগান থেকে শুরু করে বিশেষ ক্যাকটাস—ফাইয়াজের প্রতিটি উপহারের আড়ালে কি শুধু ক্ষমা প্রার্থনা লুকিয়ে আছে, নাকি আছে কোনো না বলা ভালোবাসার স্বীকারোক্তি?

ফাইয়াজের উপহার দেওয়া বিড়াল ‘রুশো’ যখন হুরের মন গলিয়ে দিচ্ছে, তখন রাতের অন্ধকারে সেই রহস্যময় অতিথি আবারও ফিরে আসে। এবার তার কথায় ছিল ভালোবাসার পাশাপাশি এক অদ্ভুত অধিকারবোধ। হুর কি পারবে এই দ্বৈত পরিচয়ের রহস্য ভেদ করতে, নাকি সে আরও গভীরে জড়িয়ে পড়বে?

ফাইয়াজের বাড়ি ফিরে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসতেই হুরের মনটা অজানা কারণে ভারী হয়ে ওঠে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেও, ফাইয়াজ শুধু হুরের জন্যই ফিরে আসে। সেই বিদায়ী মুহূর্তে তার আকস্মিক আলিঙ্গন আর বলা কথাগুলো কি তাদের দুজনের মাঝে জমে থাকা দূরত্বের অবসান ঘটাবে?

এক মাস পর ফাইয়াজের হঠাৎ আগমন হুরের মনে প্রশ্ন জাগালেও, ভার্সিটির এক অন্ধকার ক্লাসরুমে সে মুখোমুখি হয় সেই রাতের অতিথির। অন্য এক ছেলের পক্ষ নেওয়ায় তার উপর নেমে আসে তীব্র ক্রোধ আর শাস্তি। এই হিংস্র প্রেমিক কি ফাইয়াজ নিজেই, নাকি অন্য কেউ যে ফাইয়াজের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে?

হঠাৎ করেই ফাইয়াজের সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসে এবং এক রাতের মধ্যেই সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরিবারের खुशीর জন্য হুর রাজী হলেও, তার মন জুড়ে থাকে ফারানের স্মৃতি আর ফাইয়াজের রহস্যময় আচরণ। এই আকস্মিক বিয়ে কি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, নাকি কোনো অজানা ষড়যন্ত্রের অংশ?

বিয়ের প্রথম রাতে ফাইয়াজের সাথে হুরের কথোপকথনে উঠে আসে ভালোবাসার পুরোনো স্মৃতি আর না বলা কষ্টের কথা। ফারানের জন্য হুরের কষ্ট দেখে ফাইয়াজের তীব্র প্রতিক্রিয়া আর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা কোন রহস্যের ইঙ্গিত দেয়? ফারান আর ফাইয়াজের মধ্যে কি কোনো সংযোগ আছে?

বিয়ের পরদিন সকালে ফাইয়াজের অধিকারসূচক আচরণ আর খুনসুটি হুরের মনে এক নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়। ‘তুমি আমার বউ’—এই একটি কথাই যেন তাদের মধ্যকার সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ফারানের পরিচয়ে লুকিয়ে থাকা ফাইয়াজ কি পারবে হুরের বিশ্বাস অর্জন করতে?

হুর যখন নিজেই শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন ফাইয়াজসহ সবাই অবাক হয়ে যায়। তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের পেছনে কি শুধুই দায়িত্ববোধ কাজ করছে, নাকি ফারান-রহস্যের সমাধান খোঁজার জন্যই সে এই পদক্ষেপ নিল? ফাইয়াজের মনে কেন এই নিয়ে সন্দেহের জন্ম হলো?

হলুদ অনুষ্ঠানের আগে ফাইয়াজ লুকিয়ে হুরের কাছে আসে এবং সবার আগে তাকে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়। তার দেওয়া চিরকুটে লেখা দুষ্টুমিভরা কথাগুলো হুরের মনে আনন্দের ঢেউ তুললেও, এই সাজানো অনুষ্ঠানের আড়ালে কি কোনো বিপদ ঘনিয়ে আসছে?

বিয়ের অনুষ্ঠানের পর হুরের বিদায়বেলায় যখন সবার চোখে জল, তখন ফাইয়াজ এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নেয়। সে হুরের পুরো পরিবারকে তাদের সাথে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। স্বামীর এই অপ্রত্যাশিত ভালোবাসায় হুরের মন গলে গেলেও, এই সুখের মুহূর্ত কি দীর্ঘস্থায়ী হবে?

হুর আর ফাইয়াজের পছন্দের রঙে সাজানো বাসর ঘরে তৈরি হয় এক মুগ্ধকর পরিবেশ। ফাইয়াজের যত্ন, ভালোবাসা আর খালি গলায় গাওয়া গান হুরের মন জয় করে নিলেও, তার বলা কথাগুলো এক নতুন রহস্যের জন্ম দেয়। ফাইয়াজ কোন সত্যটা হুরের কাছ থেকে লুকাতে চাইছে?

ফাইয়াজের বাড়িতে ভালোবাসায় দিন কাটলেও, কড়া নিরাপত্তা আর সার্বক্ষণিক গার্ডের উপস্থিতি হুরের কাছে দমবন্ধকর মনে হয়। ফাইয়াজ কেন তাকে এতটা আগলে রাখছে? এই নিরাপত্তার দেয়াল কি তাকে কোনো বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য, নাকি তার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য?

ফাইয়াজের নিষেধ অমান্য করে হুর আর লিয়া লুকিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পার্কে যায়। কিন্তু সেই স্বাধীনতাটুকুই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গুন্ডাদের আক্রমণে হুর যখন মারাত্মকভাবে আহত এবং অপহৃত হয়, তখন লিয়া কি পারবে সময়মতো ফাইয়াজকে খবরটা পৌঁছাতে?

হুরকে বাঁচাতে ফাইয়াজ যখন মোস্তফা চৌধুরীর ডেরায় পৌঁছায়, তখন দুই পুরোনো শত্রুর মধ্যে শুরু হয় কথার লড়াই। কিন্তু হুরের সামনেই ফাইয়াজ যখন মোস্তফা চৌধুরীকে নৃশংসভাবে খুন করে, তখন তার এই ভয়ংকর রূপ দেখে হুরের ভালোবাসা কি ঘৃণায় পরিণত হবে?

ফাইয়াজকে খুনি ভেবে হুর যখন তাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন ফাইয়াজ তার জীবনের সেই ভয়ংকর অতীত প্রকাশ করতে বাধ্য হয়। ২২ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস রাতের ঘটনা কি পারবে হুরের মনের সব ঘৃণা আর অবিশ্বাস দূর করে দিতে?

ফাইয়াজের জীবনের সমস্ত সত্য জানার পর হুরের সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে। তিন বছর পর, তাদের ভালোবাসার সংসারে যখন নতুন অতিথির আগমনের সংবাদ আসে, তখন দুজনের জীবন এক নতুন অধ্যায়ের দিকে মোড় নেয়। এই সুখের মুহূর্ত কি তাদের সমস্ত পুরোনো কষ্ট ভুলিয়ে দেবে?