প্রকাশিত: শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
তেইশান্তে প্রেমালোক | এগারো বছর আগের সূত্র
রিয়া আর তার বান্ধবী সাফা একসঙ্গে বসে আছে। অরা দুইজন খুব ভালো বান্ধবী। বেশিরভাগ সময়ে তাদের একসঙ্গে দেখা যায়। আজও তারা একসঙ্গে বসে পড়ছে। তবে এখানে গল্পই বেশি হচ্ছে। রিয়া আর সাফা দুজনেই বসে আছে। সাফা রিয়াকে বলল,
“আচ্ছা? তাহলে এখন? কি করবি?”
“কিচ্ছু না…”
ঠিক তখনি রিয়ার ফোনটা বেজে উঠে। রিয়া পাশে পরে থাকা ফোনটা নিজের হাতে নিলো। ফোনটার দিকে তাকিয়েই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“শয়তানের নাম নিতে না নিতে শয়তান হাজির”
রিয়ার কথা শুনে পাশ থেকে সাফা অবাক হয়ে বলল’
“নিরব ফোন করেছে?”
“হুম”
রিয়ার কথায় সাফা এবার ফোনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
“কিন্তু এইটা তো আননোন নাম্বার। তুই চিনলি কি করে?”
“বুইন! ওই মানুষটা ফোন দিলে আমি বুঝি। আরেকটা বিষয় হল, আমার মোবাইলে অন্য কেও আননোন নাম্বার দিয়ে কল দেয় না”
“বাপরে… এখন ধর ফোনটা”
সাফার কথায় রিয়া ফোনটার দিকে তাকিয়ে ধিরে ধিরে ফোনটা ধরে কানে দিলো,
“৭৩ তম নাম্বার এইটা”
“হুমমম… প্রিন্সেস… তুমি তো এই নাম্বার টাও ব্লক করবা। আমি জানি”
“আপনি যেহেতু জানেনই… তাহলে ফোন কেন দেন। শুধু শুধু আমাকে কেন জ্বালান?”
“আমার ভাল্লাগে… আমার ভাল্লাগে তোমার ওই কণ্ঠ, তোমার রাগি চেহারা”
“হইছে? বাই”
বলেই কল কেটে দিলো রিয়া। কল কেটেই ফোনটা পাশে ছুড়ে মারল। রিয়া রাগে ফুসছে। রিয়াকে এমন করতে দেখে সাফা বলল,
“কিরে ফোন রাখলি কেন? এই নাম্বার ব্লক করবি না?”
“হুম। করে দিব নে”
রিয়ার এমন দায়সারা কথা শুনে সাফা এবার এগিয়ে এসে রিয়ার হাত ধরে বলল,
“কেন রিয়া? মানুষটা তোরে এতো ভালোবাসে… তবুও কেন? এমন তো না যে তুই কিছুই ফিল করিস না। তুইও তো ফিল করিস। তাহলে কেন করিস এমন?”
সাফা কথায় রিয়া সাফা দিকে তাকায়। সাফার চোখে চোখে রেখে বলে,
“কারণ এটাই করা উচিত। সাফা… আমি জানি মানুষটা আমায় কত ভালোবাসে। কিন্তু তুই যেটা বলছিস, ওইটা তো সম্ভব না”
সাফা এবার উত্তেজিত হয়ে রাগ করে বলে,
“কেন সম্ভব না রিয়া? কি সমস্যা?”
রিয়া সাফার হাতের উপর নিজের আরেকটা হাত দিলে সেদিকে তাকিয়েই বলল,
“আমার পরিবার! সাফা তুই আমার পরিবারকে চিনোস। তারা একটা ভালো পরিবারের সুশিক্ষিত ছেলে চায়। যে কিনা নিজের জীবনে সফল। আর অন্যদিকে ওই ছেলে তো বেকার। নিজের বাপের টাকায় চলে”
এইদিকে সাফা নাছরবান্দা। ও রিয়াকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে বলল,
“রিয়া… ও তো ওর বাবার ব্যবসা ধরবে। আর ওর বাবার তো অনেক বড় ব্যবসা। অনেক বড়লোক তারা। নীরবও সেই ব্যবসাই ধরবে। তো সেই হিসেবে তো নিরব নিজে ইনকাম করবেই”
“সাফা… আমার পরিবারের সবচেয়ে অপছন্দীয় পেশা হল ব্যবসা। তারা ব্যবসায় বিশ্বাস করে না। আজ আছে তো কাল নেই। তারা সরকারি চাকরিজীবী ছেলে চায়”
“তো তুই তাদের বোঝা”
সাফার কথায় রিয়া হালকা হেসে উরিয়ে দিয়ে বলে,
“সবকিছু যদি এতো সহজ হতো… তাহলে তো হতোই”
রিয়া কথাটা বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রিয়ার এমন অবস্থা দেখে সাফা রিয়াকে জড়িয়ে ধরল। অদ্ভুদভাবে রিয়া সাফার কাঠে মাথা রেখে কেদে ফেলে। কি আশ্চর্য! যেই ছেলেটাকে সবার সামনে অপমান করে সেই ছেলেটার জন্যই আবার লুকিয়ে কান্না করে! এইটাই হয়তো ভালোবাসা!
রায়ান আজ সারা দিন বাসায় ছিল। সে আজ কেসটার হিসাব মিলাতেই ব্যাস্ত ছিল। এখনো তাই মিলাচ্ছে। রায়ান যত হিসাব মিলাচ্ছে তত যেন সব আবার আওলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আর বাসায় বসে বসে ভাবা যাচ্ছে না। এবার একটু খোলা আবহাওয়া দরকার। তাই বিকেলের দিকে বের হল। বাসার পাশের ছোট্ট পার্কটাতে বসলো। বসেই একটা সিগারেট ধরালো। আজকের আবহাওয়াটা বেশ অন্যরকম। কেমন যেন শান্তি লাগছে। আশপাশ কেমন যেন নিরব। মানুষ তো আছে, তবুও সব ঠাণ্ডা লাগছে। রায়ানের কপালে ভাজ পরে আছে। এতো সুন্দর আবহাওয়ায়ও রায়ানের ভালো লাগছে না। টানা টানা চোখ দুটো কেমন যেন মরা মরা হয়ে আছে। রায়ান বসে বসে সিগারেটে ধোঁয়া উরাচ্ছে। মাথায় তার চিন্তা। আর মাত্র ৭ ঘণ্টা পরেই টাকে আবার কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হবে। কিভাবে এসব আটকাবে রায়ান? তীব্র চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। কিন্তু হঠাৎই নিবর পরিবেশে কোন এক মিষ্টি স্বর শোনা গেল। এমন সময় চিরচেনা সেই মিষ্টি স্বরে ডাকা নিজের নাম শুনে রায়ান তারাতারি করে উঠে দাঁড়ালো। পিছে ফিরে তাকাতেই দেখল চেনা সেই প্রিয় মুখখানি। নিলাও এই যায়গায় হাঁটতে এসেছিলো। রায়ানকে দেখেই দূর থেকে ছুটে এসেছে। নিলা রায়ানকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
“আপনি এখানে? কেমন আ…”
আর কিছু বলতে পারল না নিলা। নিলার চোখ আটকে গেছে রায়ানের হাতে থাকা সিগারেটের দিকে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিগারেটটা দেখছে। রায়ান নিলার চোখ অবলম্বন করে তাকিয়ে যখন বুঝলো যে, নিলা ওর হাতে সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন সে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটটা ছুরে ফেলে দিলো দূরে। নিলা তখনো হতভম্বের মতন তাকিয়ে আছে। বড় বড় চোখ করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি সিগারেট খান?”
রায়ানের এই মুহূর্তের অবস্থা চোর ধরা পড়ার মতনই। রায়ান ঘারে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে অপরাধী গলায় বলল,
“না মানে… বিশ্বাস করো সব সময় খাই না। আসলে… মাঝে মাঝে অনেক বেশি চিন্তায় থাকলে… একটু আকটু খাই”
নিলা রায়ানের কথায় পাত্তা না দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলল,
“আমার এসব পছন্দ না”
নিলার কথার মাঝে থাকা হালকা অধিকার ভাবটা বুঝল রায়ান। নিলার অভিমানী আর রাগি রাগি চেহারাটা দেখে একটু হাসলো। তারপর মেকি স্বরে বলল,
“ওকে ম্যম! আপনার যেহেতু পছন্দ না তাহলে তো আর ওইসব নিয়ে ভাবাই যাবে না। এবার থেকে বেশি চিন্তায় থাকলে চিন্তা বাদ দিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে পরবো তাও এসব আজেবাজে খাব না”
রায়ানের কথায় নিলা এবার অভিমানী চেহারা বদলে মিষ্টি হাসলো। নিলার সেই হাসির দিকে তাকিয়েই রায়ান মনে মনে বলল,
“হায়… তোমার এই হাসির জন্য তো আমি পুরো দুনিয়া ছাড়তে রাজি অপরিচিতা”
“কি ভাবছেন?”
নিলার কথায় রায়ানের হুস ফিরলো। এদিক অদিক তাকিয়ে বলল,
“নাহ! কিছু না! কিন্তু তুমি এই এলাকায়? মানে আগে তো কখনো তোমাকে এই এলাকায় দেখি নি?”
রায়ানের কথায় নিলা হালকা হাসলো আর বলল,
“হ্যাঁ, আসলে আমি এই এলাকায় শিফট হয়েছি”
নিলার কথায় রায়ান এবার বেশ অবাক হলো। অবাক হয়ে বলল,
“তাই নাকি? কবে?”
“এইতো আজকে সকালেই আসলাম। আর এখন বেড়িয়েছিলাম এলাকাটা একটু দেখতে”
নিলার কথায় রায়ান আরো অবাক হলো। কিছু একটা জানার উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমার পরিবার কি তোমার সাথে থাকে?”
রায়ানের কথায় নিলার হাসিখুসি মুখটা চুপসে যায়। রায়ান কারণটা বুঝল না। তবে নিলা আসতে আসতে বলল,
“আসলে… আমার পরিবার বলতে আমি আর আমার মা। আর আমার মা একজন মানসিক রোগী। সে আমার সাথে থাকে না”
নিলার কথায় রায়ান বেশ কষ্ট পেল। তাই সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“সরি! আসলে আমি বুঝতে পারি নি”
“আরেহ! না না! আপনার কি দোষ? আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার অধিকার তো আপনার আছেই। আপনার কোন দোষ নেই”
নিলার কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলেও তার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। রায়ানকে আর কিছু বলতে না দেখে নিলা এবার বলল,
“চলুন সামনে হাঁটি”
নিলার কথায় রায়ানও এবার সম্মতি দিয়ে হাঁটা শুরু করলো। নিলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলল,
“আচ্ছা কেসের কি অবস্থা?”
নিলার প্রশ্নে এবার রায়ানের আবারো কেসের কথা মনে পড়লো। সে নিলাকে একে একে সব বলল। নিলাও সবকিছু শুনে বেশ চিন্তায় পড়লো। নিলা এবার কিছু একটা ভেবে বলল,
“আমাদের তো এবার প্লান করে ধাপে ধাপে কাজ করা উচিত”
“হুম। ঠিক বলছ! কিভাবে শুরু করা যায় বলোতো”
রায়ানের কথায় নিলা এবার ভাবনায় পড়লো। থুতনিতে হাত রেখে ভাবতে লাগলো। কিছুক্ষন পর বলল,
“আমাদের আগে ওই লোকের আনুমানিক ঠিকানা বের করতে হবে। কেননা ওই লোক পৃথিবীর যেকোনো স্থানে থাকতে পারে। তাই আমাদের আগে ওই লোকের অবস্থানের ধারনা লাগাতে হবে”
নিলার কথাটা রায়ানের বেশ যুক্তিযুক্ত বলে মনে হলো। কিন্তু ওরা ওই লোকের অবস্থানের ধারনা লাগাবে কিভাবে? রায়ান এবার হাঁটা বন্ধ করে পাশের একটা বেঞ্চে বসলো। রায়ানকে বসতে দেখে নিলাও রায়ানের পাশেই বসলো। হঠাৎই নিলার দিকে তাকিয়ে রায়ান বলল,
“আচ্ছা! সে তো প্রথমেই পুরো পৃথিবীর মানুষদের মারা শুরু করে নি। তাই না? প্রথমে তো সে নিজের আশেপাশের মানুষদেরই মেরেছে তাইনা?”
“হুম। কিন্তু এতে কিভাবে…?”
“আমরা তার প্রথম দিকের মারা মানুষদের খোঁজ লাগাবো। বেশিরভাগ মানুষ যেখানের হবে, সেও সেখানের। তবে প্রথমে দেশের খোঁজ লাগানো জরুরী”
রায়ানকে এত দ্রুত এত দুর্দান্ত বুদ্ধি বের করতে দেখে নিলা বেশ অবাক হল। রায়ানের মাথা খুব দ্রুত চলে তা নিলা জানতো। কিন্তু এতো দ্রুত চলে তা নিলা জানতো না। তাই সে অবাক হয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে তাকে বাহবা দিতে দিতে বলে,
“বাহ! খুব ভালো! অসাধারন! এত তারাতারি এতো ভালো বুদ্ধি কিভাবে পেলেন আপনি?”
নিলার বাহবা শুনে রায়ান কিছু বলতেই যাবে তার আগেই নিলা উঠে দাড়ায় আর বলে,
“চলুন! আর সময় নষ্ট করা যাবে না। এখনি ১১ বছর আগের ২৩ সংখ্যার আত্ম*হত্যা গুলো দেখতে হবে”
নিলাকে এভাবে উঠে যেতে দেখে রায়ান বলল,
“দাড়াও নিলা… আমাদের কোথাও যেতে হবে না। আমি আমার পিএ মাসুমকে কল করে তথ্য গুলো দিতে বলছি। সে আমাদের তথ্য এনে দিবে। আর নিলা… তুমি একটা কাজ কর, তুমি তোমার বাসায় যাও। আমি দেখছি বিষয়টা”