প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
তেইশান্তে প্রেমালোক | অপরিচিতার আহ্বান
মেঘলা আকাশ, হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। এখন বিকেল সাড়ে ৪ টা। রায়ান লাইব্রেরির সামনে দাড়িয়ে আছে। অপরিচিতার জন্য আজ আবার আসলো এই লাইব্রেরিতে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে সাহস নিয়ে প্রবেশ করলো ভেতরে। রায়ান ভেতরে ঢুকে একবার চারপাশটা দেখে নিলো। তারপর ওইদিক টায় গেলো যেইখানে কালকে অপরিচিতা ছিল। কিন্তু কই আজ তো সে নাই! আজ অপরিচিতা নেই এখানে! কই সে? সে কই আর আসবে না? রায়ানের অনেক অসহায় লাগা শুরু করলো। রায়ান কিছুই বুঝতে পারছে না। তাহলে কি ও আর অপরিচিতার সাথে দেখা করতে পারবে না? রায়ান ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পরে। ওর কিচ্ছুই ভালো লাগছে না। এক দিনের দেখায় একটা মানুষের প্রতি এতটা আসক্ত হয়ে গেছে যে তাকে ছাড়া ভাবতেই কষ্ট লাগছে। রায়ান ভাঙ্গা মন নিয়ে লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে আসলো। কালকেও অফিসে যায় নাই। তাই আজ মনটা ভালো না থাকা সত্ত্বেও অফিসের দিকে গেলো। রায়ান গাড়ি চালিয়ে অফিসের দিকে যাচ্ছে। অফিসের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামতে নিলে তখনি ওর ফোনে একটা মেসেজ আসে। ফোনটা হাতে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে মেসজটার দিকে চোখ গেলো ওর। “২৩২৩২৩” নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। রায়ান সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ টায় ঢুকলো
“২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩২৩……”
এরকম হাজারো ২৩ সংখ্যা লেখা একটা মেসেজে। রায়ান মেসেজটা দেখে বেশ অবাক হলো। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে অফিসে ঢুকল। সময় নষ্ট না করে নাম্বারটা ট্র্যাকিং করতে দিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত এমন কোন নাম্বারই পৃথিবীতে নেই। রায়ান জানতো, এভাবে এই নাম্বারের মালিককে পাওয়া যাবে না। তাকে খুজে পাওয়ার যাত্রাটা এতোটাও সোজা হবে না। তবুও একবার ট্রাই করে দেখল।
এখন সকাল ৯ টা। ওইদিন অপরিচিতার সাথে এই টাইমেই দেখা হয়েছিলো। তাই রায়ানের মনে হলো এই টাইম টাতে সে থাকলেও থাকতে পারে। তাই আজ আবার আসলো লাইব্রেরির সামনে। নিল রঙের সার্ট পরেছে রায়ান। এমনিতে ও কালো আর সাদা ছাড়া অন্যান্য কালার পরে না। তবে আজ পরতে ইচ্ছা করলো, তাই পড়লো। রায়ান এক দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে প্রবেশ করতেই নিজের পছন্দের সাইটটাতে নিজের পছন্দের মানুষটাকে দেখতে পেল। অপরিচিতা আজ নিল রঙের থ্রি পিছ পরেছে। লম্বা চুলগুলো এক বেনি করা। ছোট ছোট চুল গুলো সামনে পরে আছে। আজও তাকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে। মেয়েটা আজ একটা মোটা বই পরছে। আর সে খুব বেশি মনোযোগ দিয়ে বইটা পরছে। অপরিচিতা তার ভ্রু কুচকে রেখেছে। যেনো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে পারল। তাকে এমন মনোযোগী ভঙ্গিতে পরতে দেখে রায়ানের বেশ কৌতূহল হল বইটা নিয়ে। তাই বইটার নাম দেখার জন্য এবার সে মেয়েটার পাশের সেলফটার দিকে গেলো। সেখানে গিয়ে আড় চোখে বইটার নাম দেখার চেষ্টা করলো। অনেক চেষ্টার পর যখন নামটা দেখল, সঙ্গে সঙ্গে ও বিষম খেলো। কাশতে কাশতে পেতে হাত দিয়ে নুয়ে পড়লো। ওকে এভাবে কাশতে দেখে মেয়েটিও বেশ অবাক হল। মেয়েটিকে অবাক হতে দেখে রায়ান সেভাবেই সেখান থেকে বের হয়ে আসলো।
রায়ান লাইব্রেরির সামনেই পাইচারি করছে। মেয়েটার হাতে “মহাকালের ২৩” নামক বইটা ছিল। কিন্তু সে ওই বই কেন পরছিল? সে কি ২৩ নিয়ে কিছু জানে? সে কি ২৩ এর সাথে কোনোভাবে জড়িত? রায়ানের মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এমন সময় মেয়েটা লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসে। তাকে বেরিয়ে আসতে দেখে রায়ান পাইচারি বন্ধ করে। হঠাৎ রায়ানের মনে হচ্ছে মেয়েটা ওর দিকেই আসছে। হ্যাঁ! মেয়েটা ওর দিকেই আসছে! কিন্তু কেন? রায়ান বেশ জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটা এতক্ষনে রায়ানের সামনে এসে দাড়িয়েছে।
“আমি যদি ভুল না হই, আপনিই তো গোয়েন্দা তাজওয়ার হোসেন। তাই না”
মেয়েটির মুখে নিজের পরিচয় শুনে রায়ান বেশ অবাক হল। কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। বরং স্বাভাবিক গলায় বলল,
“জি”
“আমার আপনার সাহায্য লাগবে”
“আমার? আমি…আমি কিভাবে?”
মেয়েটা এবার আশেপাশে একবার ঘার ঘুরিয়ে তাকাল। তারপর রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চলুন কোথাও বসি”
“হুম। পাশেই একটা ক্যাফে আছে”
রায়ান আর মেয়েটা দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। রায়ান এখনও বুঝতে পারছে না ও মেয়েটা কি কাজে আসতে পারে। রায়ানের এই মুহূর্তে বেশ অস্থির লাগছে। নিলা নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের মতন করে হাঁটছে। আর রায়ান একটু পর পর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ রায়ান মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল,
“আচ্ছা, আপনি আমাকে কিভাবে চিনলেন?”
“আমার আপনার সাহায্য দরকার ছিল। তাই আপনার খোঁজ নিয়েছি”
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা ক্যাফেতে এসে পৌছায়। রায়ান আর মেয়েটা একটা টেবিলে সামনা সামনি বসেছে। দুজনেই চুপ। কেও কিছুই বলছিল না। কিন্তু এবার মেয়েটা নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
“আমি অপরিচিতা”