প্রকাশিত: সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫
তেইশান্তে প্রেমালোক | জুটিবদ্ধ তদন্তের শুরু
“আমি অপরিচিতা”
রায়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিগেই বসে ছিল। কিন্তু নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই রায়ান বিষম খেলো। কাশতে কাশতে টেবিলের দিকে নুয়ে পরেছে। রায়ানের হঠাৎ এমন কাণ্ডে মেয়েটা বেশ ভরকে গেছে। তারাতারি উঠে দাড়িয়ে এক গ্লাস পানি আগিয়ে দিলো রায়ানের দিকে। রায়ানও তারাতারি পানিটুকু শেষ করলো। তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার নামই অপরিচিতা?”
রায়ান অতি উত্তেজনায় মেয়েটাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে ফেলেছে। রায়ান বিষয়টা বুঝতে পেরে সরি বলতেই যাবে ঠিক তখনি মেয়েটা ওকে বাধা দিয়ে বলে,
“না না! থাক সরি বলতে হবে না। আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন”
প্রথম কথায়ই তুমি বলার অনুমুতি পাওয়ায় রায়ানের বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু কিছুই প্রকাশ করলো না। মেয়েটা এবার নিজের জাওগায় বসলো আর বলল,
“হ্যাঁ, আমার নামই অপরিচিতা। আমি যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজে এই নাম ব্যবহার করি। তবে আমার কাছের মানুষরা আমায় নিলা নামে ডাকে”
মেয়েটার কথায় রায়ান এবার মুখের কাছে হাত রেখে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“তাহলে আমি নিলা নামেই ডাকবো”
“কিছু বললেন?”
“কই নাতো”
নিলা এবার সিরিয়াস হয়ে বসলো। তারপর সিরিয়াস ভাবে বলা শুরু করলো,
“আমি একজন মনোবিজ্ঞানী। গত কয়েক মাস ধরে আমার কাছে কিছু অদ্ভুদ রোগী আসছে। যারা কিনা ২৩ সংখ্যার জন্য মানসিক চাপে পরেছে। আমার কাছে বিষয়টা অতিরিক্ত অদ্ভুদ লাগে। তাই আমি বিষয়টা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। আর আমি শুনেছি আপনিও এই সংখ্যারই কেস পেয়েছেন। তাই আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি”
রায়ান কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল। তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
“আমি আপনার কই সাহায্য করতে পারি?”
“আপনার আমার জন্য কিছুই করতে হবে না। শুধু আপনার গবেষণায় আমাকে আপনার পার্টনার বানিয়ে নেন”
হঠাৎ এমন প্রস্তাবে রায়ান ভ্রু কুচকে তাকাল। রায়ান এমন কিছু মটেও আশা করে নি। সে এই পর্যন্ত যত কেস সমাধান করেছে সব একা হাতেই করেছে। কোন সময় কারো সাথে পার্টনারশিপ করে নি। আর তার চেয়েও বড় কথা এইবারের কেসটা কিছুটা বিপদজনক। যেটাতে রায়ান নিলাকে জড়াতে চায় না। যদিও রায়ান ২৩ কে বিপদজনক ভাবে না, তবুও তার কাছে আসা হুমকি গুলো দেখলে আই কেসটাকে একটা বিপদজনক কেস বলেই মনে হয়। আর রায়ান এই মেয়েকে নিয়ে কোন রিক্স নিতে চায় না। রায়ান এবার নিলার নিল চোখে চোখ রেখে বলল,
“দেখো, এই কেসটা অনেক বিপদজনক। আমি অন্য কারো জিবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারব না”
লিনা রায়ানের কথা শুনে এক দীর্ঘশ্বাস নিলো। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
“তার মানে আপনি আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করলেন। তাই তো?”
“এই না না! অস্বীকার করতে যাবো কেন? তোমার যে তথ্য প্রয়োজন হবে, তুমি আমায় বলবে। আমি দিব। কিন্তু তবুও তোমাকে ২৩ এর সাথে জড়াতে পারব না”
নিলা আবারো একই ভঙ্গিতে কিছুটা অভিমানি ভাবে মিষ্টি স্বরে বলল,
“আমার কোন তথ্য লাগবে না। আমাকে সাহায্য করতে হলে ওভাবেই করতে হবে”
রায়ান কি আর করবে? অপরিচিত কারো উপর তো আর অধিকার খাটানো যায় না। তাই বাধ্য হয়ে রায়ান এবার রাজি হলো। লিনাকে নিজের কেসের পার্টনার বানিয়ে নিলো। এরপর রায়ান বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে ছিল। তখনি নিলা রায়ানের সামনে একটা কার্ড আগিয়ে দিয়ে বলে,
“এইটা আমার ভিসিটিং কার্ড”
“আমি কি মানসিক রোগী নাকি?”
রায়ানের কথায় নিলা এবার হেসে দেয়। রায়ান ইচ্ছা করেই কথাটা বলেছে। আর কারণটা হলো এই মিষ্টি হাসি। রায়ানের কাছে এই মিষ্টি হাসিই সব। রায়ান এক দৃষ্টিতে সেই হাসি দেখছে। নিলা এবার বলল,
“আপনি মানসিক রুগী হতে যাবেন কেন? আমার কার্ডটা আপনাকে দিলাম কারন এখানে আমার নাম্বার আর ইনফরমেসন আছে। যদি প্রয়োজন হয় এখান থেকে নিয়ে নিতে পারবেন”
নিলার কথায় রায়ান কার্ডটা নিজের হাতে নিলো। রায়ান কার্ডটাই দেখছিল। তখনি নিলা বলে,
“আচ্ছা, আজকে আসি তাহলে”
“হুম”
এতক্ষনে নিলা চলে গেছে। কিন্তু রায়ান এখনও সেখানেই বসে আছে। ও নিলার কার্ডটার নিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। কার্ডটার দিকে তাকিয়েই করুন গলায় বলল,
“হুম। আমি মানসিক রোগী। বিশ্বাস কর অপরিচিতা! আমি আগে এমন ছিলাম না! কিন্তু এখন কেমন করে যেন এমন হয়ে গেছি। আমি মানসিক রুগি হয়ে গেছি অপরিচিতা। আর আমার এই রোগের কারন শুধুমাত্র তোমার ওই মিষ্টি হাসি। আমি তোমার ওই মিষ্টি হাসি দেখার পর থেকে মানসিক রোগী হয়ে গেছি। আমি তোমার রোগী হয়ে গেছি অপরিচিতা”
রায়ান আরও কিচুক্ষন কার্ডটার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর কার্ডটা পকেটে রেখে উঠে দাঁড়ালো। চলেই যাবে কিন্তু তখনি ওর চোখ গেলো নিলার জন্য অর্ডার করা কফির কাপের দিকে। কাপটা যেমন ছিল তেমনি আছে। নিলা রএকটুও কফি খায় নি।
রিয়া চিকন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ভার্সিটি থেকে বাসায় যাচ্ছে সে। রিয়া দেখতে বেশ ভালো। তবে গায়ের রঙটা শুধু হালকা শ্যামলা। এছাড়া কোন দিক দিয়ে কম না সে। সৌন্দর্যের কথা বললে, লম্বা ঘন চুল, যদি অন্যান্য গুনের কথা বলা হয় তবে, পড়ালেখায় বরাবরি সে খুব পারফেক্ট বডি, পারফেক্ট উচ্চতা আর সুন্দর মুখের গঠন আছে তার। আর ভালো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে ও। এখন উকিল হবার জন্য পড়ালেখা করছে। এখন বিকেল। রিয়া নিজের মতো করে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ কেও একজন এসে রিয়ার সামনে দারায়। রিয়া ছেলেটিকে দেখেই নিজের ভ্রু কুচকে নেয়। ছেলেটি তারাতারি রিয়ার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
“এই এই এই… দাড়াও দাড়াও”
“কি সমস্যা?”
রিয়ার এমন বিরক্তি ভাবে উত্তর দেওয়া দেখে নিরব এবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুই পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বলল,
“সমস্যা মানে? দরকার বলেই তো ডেকেছি”
“কি বলবেন তারাতারি বলেন”
রিয়া তারাহুরা দেখে নিরব ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। নিরবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়া কিছু বলবে এমন সময়ে নিরব বলল,
“কেমন আছো?”
নিরবের এমন অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নে রিয়ার এবার প্রচুর রাগ উঠলো। রাগ করে বলল,
“এই যে আলালের ঘরের দুলাল… আমি যদি এখন আমার ভাইকে গিয়ে বিচার দিয়ে দেই, তাহলে আপনার কি হবে বুঝতে পারছেন?”
রিয়ার কথায় নিরব এবার মসা মারার মতন করে বলল,
“শুনো প্রিন্সেস, আমি এই পৃথিবীতে আমার মা বাবা ছাড়া আর কাওকে ভয় পাই না। এমনকি তোমার ভাইকেও না”
“এহহ! যখন পিঠের উপর উত্তম মাধ্যম পরবে তখনি বুঝবেন কত ধানে কত চাল”
“না গো, আমার তখন জানা লাগব না। আমি এখনি জানি, একটা ধানে একটাই চাল হয়”
নিরবের এমন কথায় রিয়া এবার বিরক্তিতে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আজাইরা”
রিয়াকে এভাবে নাক ফুলিয়ে চলে যেতে দেখে নিরব এবার নিজেই নিজের বিকের বা পাশে হাত রেখে আসতে আসতে বলে,
“ওরে আমার মনের প্রিন্সেস রে… তোমারে রাগাইতে যে আমার কি ভাল্লাগে…”