প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫
তেইশান্তে প্রেমালোক | তেইশে মৃত্যু, তেইশে ভয়
আজকের বিকেলের আবহাওয়াটা বেশ মেঘলা। কালো মেঘ আর শীতল বাতাসে পুরো শহর ঠাণ্ডা হয়ে আছে। রায়ান তার অফিসের কক্ষে বসে আছে ঘণ্টা খানেক হয়েছে। হঠাৎ ফোনে তার পিএ মাসুমের কল আসে। রায়ান প্রত্যেক বারের মতনই এবারো প্রথমবারে কল রিসিভ করে না। প্রায় ৪ বার কল আসার পর একদম শেষ সময় কল রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মাসুম বলল,
“স্যার, আপনাকে কিছু ফাইল পাঠানো হয়েছে। একটু কষ্ট করে চেক করে নিয়েন”
বলেই কল কেটে দিলো মাসুম। মাসুমের কথায় রায়ান এবার ফাইলগুলো চেক করলো। ফাইলগুলো চেক করেই রায়ান হাতে আবার ফোন নিলো। হঠাৎ করেই রায়ানের হাত কাপছে। এই শীতল পরিবেশে এছির নিচে বসেও রায়ান ঘামছে। রায়ানের এক হাতে নিলার দেওয়া কার্ড আর আরেক হাতে নিলার নাম্বার ডায়াল করে রাখা ফোন। রায়ান ফোনটা প্রয়োজনেই দিচ্ছে। তবুও রায়ানের বেশ অস্থির লাগছে। প্রায় অনেক্ষন বিলম্ব করে যেই না কল দিতে যাবে, ঠিক ওই মুহূর্তে ওর ফোনে কল আসে। কল করা নাম্বারটা দেখে তো রায়ানের চক্ষু কপালে। ডায়াল করে রাখা নাম্বারটা দিয়েই কল আসছে। রায়ান তারাতারি কলটা রিসিভ করলো। রিসিভ করেই রায়ান জিজ্ঞেস করলো,
“এই তুমি আমার নাম্বার কই পেলে?”
“আজকের দুনিয়ায় কারো নাম্বার পাওয়া কোন কঠিন কিছু না। আচ্ছা, যাই হোক, কেসের কই খবর? আমার কোন সাহায্য লাগবে?”
নিলার কথায় রায়ান এবার বেশ অবাক হলো। এই মেয়ে কি মন পরতে পারে নাকি? অবশ্য পারতেও পারে, মনোবিজ্ঞানী বলে কথা! রায়ান এবার একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
“হ্যাঁ, তোমার কাছ থেকে আমার কিছু তথ্য লাগবে। তোমার কাছে আসা ২৩ সংক্রান্ত সকল রোগীর লক্ষণ, পরিণতি, ব্যাকস্টোরি সব বলো”
নিলা এবার একটু মুচকি হাসলো। হাসির কারণটা অজানা রেখেই বলল,
“আমার কাছে এরকম রোগী বেশ কয়েক মাস ধরেই আসছে। আর এখন পর্যন্ত ৫ জন আত্মহ*ত্যা করেছে। তারা তাদের শেষ কিছুদিন ২৩,২৩ বলে জিকির করার মতন করে। তাছাড়া তাদের ভাষ্য মতে, ২৩ নাকি তাদের ঘিরে রেখছে, ২৩ নাকি তাদের মেরে ফেলতে চায়”
নিলার কথা শেষ হতেই রায়ান অন্যমনস্ক হয়ে বলল,
“ঠিক যেমনটা বইতে লেখা ছিল”
“আপনি কি ‘মহাকালের ২৩’ নামক বইটার কথা বলছেন?”
“হুম। আচ্ছা? যারা মারা গিয়েছে তারা ঠিক কত কত তারিখে মারা গিয়েছে?”
“ওয়েট…”
নিলা ওর কেবিনেই ছিল। তাই ওর পাসে থাকা ফাইলগুলো থেকে একটা ফাইল নিয়ে সেটা দেখতে শুরু করলো। নিলা কিছু একটা দেখে ভ্রু কুচকিয়ে বলল,
“প্রতি মাসের ২৩ তারিখ”
নিলায় কথায় রায়ান বসা থেকে উঠে দাড়ায় আর বলে,
“ঠিক যেমনটা ভেবেছিলাম”
“কি ভেবেছিলেন?”
“কিছুক্ষন আগেই দুজন ব্যাক্তি আত্মহ*ত্যা করেছে। আর আজকে ২৩ তারিখ। তাই আমার সন্দেহ হয়েছিলো যে, এই ২৩ সংখ্যার সাথে ২৩ তারিখের সম্পর্ক থাকতে পারে। আর সত্যিই মানুষরা ২৩ তারিখেই মারা যাচ্ছে। এর মানে হলো আগামী ২৩ তারিখের আগে আর কেও মারা যাবে না”
নিলা ফাইলের কাগজগুলোর দিকে তাকিয়েই হালকা ভ্রু কুচকে রায়ানের কথাগুলো শুনছিল। রায়ানের কথা সেশহবার সঙ্গে সঙ্গে বলল,
“তার মানে আমাদের যা করার আগামী ২৩ তারিখের আগেই করতে হবে”
“হুমমম। আমাদের হাতে আর মাত্র এক মাস সময় আছে। নয়তো আবার মানুষ মারা যাবে”
রায়ানের কথায় নিলা এক দীর্ঘনিঃশ্বাস নিলো। নিলা কিছু বলার আগেই আবার রায়ান বলল,
“তোমার কেসটা নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। বিষয়টা আমি দেখছি। আর এখন রাখি। পরে কথা হবে”
বলেই রায়ান কলটা কেটে দিলো। কল কেটেই ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। একটা টিসু দিয়ে কপাল আর ঘারে জমা ঘাম মুছে নিলো। নিলার সাথে এটা রায়ানের প্রথম ফোনে কথা । কিছুক্ষণ পর সে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। প্রথমে রায়নের কাছে আসা সেই হুমকি দেওয়া কল, তারপর সেই মেসেজ আর এখন প্রতি মাসের ২৩ এর ঘটনা। সব এক দিকেই ইশারা দিচ্ছে যে, এর পিছনে কোন বড় ষড়যন্ত্র চলছে।
এখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। বাইরে মুসলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। রায়ান এখনো অফিসে। চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি পড়ার শব্দ উপভগ করছে। বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ রায়ানের কানে এসে পৌছাচ্ছে। এই মুহূর্তে এই স্থান থেকে শুধুই বৃষ্টির শব্দ আর রায়ানের হালকা নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। রায়ানের কাছে এই নিরবতা বেশ ভালোই লাগছিলো। কিন্তু প্রকৃতির মনে হয় এই নিরবতা আর এতো শান্তি সহ্য হল না।তাইতো হঠাৎ করেই তার সামনে পড়ে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। রায়ান বিষয়টাতে বেশ বিরক্ত হলো। তাই প্রথমবারে ফোন রিসিভ করল না। কিন্তু না এই ফোন শান্তি দিচ্ছে না। প্রথমবার রিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার রিং হওয়া শুরু করলো। রায়ান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। দ্বিতীয়বার শেষ হয়ে আবার তৃতীয় বার ফোন বেজে উঠলো। নাহ! এবার দেখতেই হবে। রায়ান মূলত ফোনটাকে সুইচ অফ করার উদ্দেশ্যে ফোনটা হাতে নিলো। কিন্তু আর সুইচ অফ করার ভুলটা করল না। কেননা ফোনে স্কিনে যে নাম্বারটা উঠে আছে সেটা দেখার পর রায়ানের সুইচ অফ করার মত সাহস আর নাই। অনাকাঙ্ক্ষিত সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের কল এসেছে। নীলা কল করেছে। রায়ান নীলার নাম্বার এখনো সেভ করেনি। কি নামে সেভ করবে তা ভেবে আর সেভ করা হয়নি। তবে নাম্বারটা মুখস্থ থাকায় এখন সে বুঝতে পারছে এটা নীলার নাম্বার। রায়ান ফোনটা তখনি রিসিভ করল না বরং ফোনটা কিছুক্ষণ হাতে রাখলো। ফোনটা কিছুক্ষণ হাতে রেখে একদম শেষ সময় ফোনটা রিসিভ করল। ফোনটা কানে ধরে রায়ান কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে নীলার কাঁপা কাঁপা স্বরে কথা ভেসে এলো,
"আ... আমি আপনার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। একটু কষ্ট করে আসবেন?"