সায়মা ইসলাম
সায়মা ইসলাম

প্রকাশিত: শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫

তেইশান্তে প্রেমালোক | খুনির মনস্তাত্ত্বিক চাল

১৪ ভিউ
০ মন্তব্য
০ মিনিট

আজ রায়ান ভেবে রেখেছে, আজ সে বেশি চিন্তা করবে না। আজ একটু নিজেকে সময় দিবে। রায়ান কারন জানে না, তবে এখন ওর নিজেকে সময় দিতে ইচ্ছা করে, প্রিয় জনদের সময় দিতে ইচ্ছা করে, হাঁসতে ইচ্ছা করে, বাঁচতে ইচ্ছা করে। তাই আজকে সারাদিন নিরবের সাথে আড্ডা দিয়ে কাঁটালো। তারপর বিকেলের দিকে নিলাকে কল দিলো। দুবার রিং হতেই কল রিসিভ হল। কল রিসিভ হতেই রায়ান বলল,

“তুমি কি ব্যাস্ত?”

“আমি কেবিনে আছি। আপাতত কোন রোগী নেই। গুরুত্বপূর্ণ কিছু?”

“না না! আসলে… কেস নিয়ে কিছু কথা ছিল”

“আপনি কোথায় আছেন? আমাকে ঠিকানা পাঠান আমি এখনি আসতেছি”

নিলার কথায় রায়ান বেশ অবাক হলেও ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিলো। নিলার ব্যবহারে রায়ান বারবারই অবাক হয়। এই মেয়ের মাঝে কিছু তো অদ্ভুদ আছে।

রায়ান নিলাকে সেই প্রথম দিনের ক্যাফেতে ডেকেছে। প্রায় ৫ মিনিট বসতেই নিলা সেখানে আসে। নিলা তার ডাক্তারের পোশাকেই এসেছে। নিলা এসেই রায়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বসে। রায়ান নিলাকে কিছুক্ষন ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। সে কখনো ভাবেই নি যে, সে আর তার অপরিচিতা কখনো এভাবে সামনা সামনি বসতে পারবে। রায়ানের অপরিচিতা আজ তার কাছে বেশ পরিচিত। কিন্তু নিলা তার যতই পরিচিত হোক সে সারাজীবনই রায়ানের অপরিচিতাই থাকবে। রায়ানের ভাবনার মাঝেই একজন অল্পবয়সী ছেলে এসে তাদের জিজ্ঞেস করে তারা কি নিবে। রায়ান একবার আড় চোখে নিলাকে দেখে নিয়ে বলে,

“এক কাপ কফি আড় এক কাপ চা”

রায়ানের কথা শুনে ছেলেটা সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু এইদিকে নিলা বড় বড় চোখ করে রায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অবাক হয়ে বলল,

“আপনি কি করে জানলেন আমি কফি খাই না?”

নিলার কথায় রায়ান এবার মুচকি হাসলো। তারপর বলল,

“আসলে, ওইদিন তোমাকে কফি না খেতে দেখেই বুঝেছি”

রায়ানের কথায় নিলা এবার লাল টমেটো হয়ে গেলো। নিলার এরকম হুটহাট লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা রায়ানের মাথায় ঢুকে না। ওইদিকে নিলা তো রায়ানের এতো কেয়ার দেখেই লজ্জা পাচ্ছে। তারপর নিলা রায়ানকে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা, কি তথ্য পেয়েছেন?”

রায়ান এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,

“নিলা, আমি বুঝেছি আমাদের আসল শত্রু কে?”

“আপনি ‘কে’ বলতে কি বুঝাচ্ছেন? আমরা তো ২৩ সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করছি তাই না? তাহলে এখানে ‘কে’ আসলো কেন?”

“না! আমাদের আসল শত্রু ২৩ না! আমাদের আসল শত্রু একজন ব্যাক্তি। যে কিনা এই ২৩ সংখ্যাকে একটা কবজের মতন ব্যবহার করছে”

“আপনি কি এই বিষয়ে সিউর”

“হুম, আমি এই পর্যন্ত ঘটা প্রত্যেকটা ঘটনাকে ক্যালকুল্যাসন করেই বলছি। আর আমি এই বিষয়ে ১০০% সিউর”

“কিন্তু কে সে?”

ছেলেটা চা আর কফি দিয়ে গেছে। রায়ান কফির কাপে চুমুক দিলো। রায়ান কপাল কুচকে নিলার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। নিলাও বেশ অপেক্ষায় আছে। রায়ানে এবার কাপটা রাখতে রাখতে বলল,

“আমাদের যতো দ্রুত সম্ভব তার খোঁজ লাগাতে হবে। সে আর যেই হোক, কোনো স্বাভাবিক মানুষ না”

রায়ানের কথায় নিলা বেশ চিন্তিত। হঠাৎ বলল,

“আচ্ছা! এই ঘটনা তো শুধু এক জায়গায় না বরং পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। তাহলে একজন মানুষ কিভাবে পুরো পৃথিবীতে একই সময় একই কাজ করতে পারে? এটা অবশ্যই কোন অস্বাভাবিক কেও। আর সে তো এই মুহূর্তে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকতে পারে”

“থাকতেই পারে। কিন্তু আমি তাকে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও ধরে আনবো”

রায়ান ভাবল এখন আর বসে থাকা যাবে না। যা করার এখনি করতে হবে। নিলা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রায়ান এবার নিলার উদ্দেশ্যে বলল,

“তোমার কাছে কি সকল রোগীর তথ্য আছে?”

“হুম। আছে তো”

“কোথায়?”

“আমার কেবিনে”

নিলার কথায় রায়ান এবার উঠে নিলার সামনে এসে দাড়ায়। আর বলে,

“চলো”

রায়ানের আচারনে নিলা পুরো বকা বনে যায়। অবাক হয়ে বলে,

“কোথায়?”

“তোমার কেবিনে”

বলেই রায়ান বাইরের দিকে চলে যায়। রায়ানের হঠাৎ কথা নিলার মাথার উপর দিয়ে গেছে। কিন্তু তবুও উঠে রায়ানের পিছন পিছন গাড়িতে উঠে গেলো।

রায়ান নিলার কেবিনে ঢুকেই নিলার কাছে সকল রোগীদের তথ্য চাইলো। নিলা রায়ানের সাথে পার্টনারশিপে আসার পরে নিজেই কষ্টকরে সব তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছে। প্রত্যেকটা রোগীর অতীতসহ সকল তথ্য রেখেছে। রায়ান কেবিনে এসে বসেছে। নিলার কেবিনটাও অনেক বই দিয়ে ভরা। নিলা সেলফ থেকে দুই তিনটা মোটা ফাইল রায়ানকে দিলো। চারপাশে নিরবতা বিরজমান। নিলা রায়ানের সামনের চেয়ারটায় বসে আছে। নিলা এর আগে কখনো রায়ানকে এতোটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে দেখেনি। রায়ানের কপালে আজ অনেকগুলো ভাজ পরেছে।

প্রায় ২০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করলো রায়ান। তারপর ফাইলগুলো রেখে উঠে দাঁড়ালো। চুল ঠিক করতে করতে নিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“চলো”

“কোথায়?”

রায়ান আর নিলা এক নির্জন রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে। নিলা নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। তারা অনেক্ষন ধরেই হাঁটছে। নিলা এবার বলল,

“আপনি কি কিছু বুঝলেন?”

“হুম”

তারপর রায়ান আবার চুপ। আবারো নিরবতা। কিন্তু হঠাৎ রায়ান হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়ালো। রায়ানকে হঠাৎ দাঁড়াতে দেখে নিলাও দাঁড়ালো। রায়ান এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“নিলা… সবকিছু মিলে গেছে…”

রায়ানের এমন কথায় নিলার এবার শ্বাস বন্ধ হবার মতন অবস্থা। সব মিলে গেছে বলতে রায়ান কি বলতে চাচ্ছে? রায়ান কি খুনির ঠিকানা পেয়ে গেছে তার মানে? নিলা অতি উত্তেজনায় কিছুই বলতে পারছে। তাই রায়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,

“নিলা… লোকটি শুধুমাত্র এক ধরনের মানুষকেই উদ্দেশ্য করে মারে”

রায়ানের কথায় এবার নিলা উত্তেজিত হয়ে বলল,

“কাদের?”

“বেকার… কিংবা উদ্দেশ্যহীন মানুষদের। তার মতে এসব মানুষের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তারা শুধু মাত্রই আবর্জনার মতন”

রায়ানের কথায় নিলা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনেই চুপ। কিন্তু নিলা হঠাৎই রায়ানকে উদ্দেশ্য করে ভ্রু কুচকে বলে,

“আপনি কিভাবে জানেন এতকিছু?”

নিলার প্রশ্নে রায়ান এবার মুচকি হাসলো। তারপর সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

“আমি একজন গোয়েন্দা। এসব ক্রিমিনালদের মাইন্ড পড়া আমার কাছে বড় কিছু না। তুমি যেমন সাধারন মানুষের মন বুঝতে পার, আমি তেমনই ক্রিমিনালদের মন বুঝতে পারি”

“তার মানে আপনিও একজন মনোবিজ্ঞানী?”

“উমমম… বলতে পারো। আমি হলাম ক্রিমিনালদের মনোবিজ্ঞানী”

রায়ানের কথায় নিলা একদম বোকা বনে গেলো। তারপর নিজের হিসাব মিলানোর জন্য রায়ানকে আবার জিজ্ঞেস করলো,

“আচ্ছা, আপনি অতক্ষন ফাইলগুলো তে দেখছিলেন?”

“আরেহ! ওই ফাইলগুলো দেখেই তো আমি বুঝলাম যে, লোকটি শুধু উদ্দেশ্যহীন মানুষদের মারে। আসলে ওই লোক এখন পর্যন্ত যত লোক মেরেছে সবাই ছিল ছন্নছাড়া প্রকৃতির”

নিলা এবার পুরো বিষয়টা বুঝলো। তবে বলতে হবে রায়ানের চিন্তা ভাবনা বহুদূর পর্যন্ত ছড়ানো। নিলা আর রায়ান আরও অনেক্ষন কথা বলল। কেস নিয়েই টুকটাক কথা বলল। আবাক অনেক্ষন নিরবভাবে শুধু হাঁটলো। নিলা উচ্চতায় রায়ানের নাক পর্যন্ত হয়। দুজনকে এভাবে একসাথে হাঁটতে দেখতে ভালোই লাগছে। দেখতে দেখতে রাত ৯ টা ৪৬ বাজে। নিলা সময় দেখে ভীষণ অবাক হল। কথা বলতে আর হাঁটতে হাঁটতে এতো সময় কেটে যাবে ও ভাবতেও পারে নি। আজ সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিলা বলল,

“এইরে… কথা বলতে বলতে সময়ের দিকে হয়ে গেছে… আজ আসি তাহলে”

নিলার কথায় রায়ান ওকে পৌঁছে দিবে বলল। ওরা গাড়ি থেকে খানিকটা দূরে চলে এসেছে। তবুও রায়ানের কথায় নিলা আবারো গাড়ির দিকে যেতে রাজি হলো। নিলা আর রায়ান এবারো কিছু পথ হেঁটে গাড়ির কাছে এলো। তারপর নিলাকে ওর বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা দিলো। দুজনে নিঃশব্দে অনেকখানি পথ অতিক্রম করলো। প্রায় অনেকক্ষন গাড়ি চলার পর তারা নিলার বাসার সামনে আসলো। পুরো সময়টাতেই দুজন দুজনের ভাবনায় মগ্ন ছিলো। মুলত দুজনের চিন্তার বিষয় একটাই, সংখ্যা ২৩। গাড়ি থেমে গেলে নিলা রায়ানকে বিদায় জানিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে যাচ্ছে। এইদিকে রায়ান তার চিন্তা বাদ দিয়ে এক নজরে নিলার জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রায়ান ভাবছে,

“কি সুন্দর তার হাঁটার ধরন! একবার যদি পিছে ঘুরে তাকাতো!”

রায়ানের ভাবনার মাঝে হঠাতই নিলা দাড়ায়। হালকা করে পিছে ঘুরে সেই মিষ্টি হাসি দিলো। তারপর হাতের ইশারায় রায়ানকে বিদায় জানালো। তারপর আবার ঘুরে যাওয়া শুরু করলো। তখনি হঠাৎ রায়ানের ফোনে কল আসে। রায়ান কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মাসুম বলে,

“স্যার অনেক খারাপ খবর আছে! স্যার… মাত্রই দুইজন মারা গেছে”

মাসুমের কথায় রায়ান আতকে উঠলো। তারাতারি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতের ২৩ টা ২৩ বাজে। কিন্তু আজ তো ২৪ তারিখ! রায়ান কল কেটে আবারো নিলার যাওয়ার দিকে তাকাল। কিন্তু এখন আর ওকে দেখা গেলো না। টা মানে নিলা চলে গেছে। রায়ান বলল,

“তবে কি সে এখন প্রতিদিনই মানুষ মারবে?”

আজকের দিনটা মেঘলা। আকাসে কালো মেঘেরা ঘোরাঘুরি করছে। শীতল হাওয়া বইছে। বাসার ছাদে দাড়িয়ে শীতল হাওয়া উপভগ করছে রায়ান। রায়ানের চিন্তা এখন অনেক গুন বেরেছে। এখনের এক সেকেন্ড সময়ও অনেক বেশি দামি। কেননা সেই লোক এখন প্রতি ২৪ ঘণ্টা পর পর অর্থাৎ প্রতি দিনের ২৩ টা ২৩ মিনিটে মানুষ মারবে। রায়ানের এক সেকেন্ডের অবহেলার কারনে একজন মানুষের জিবন এক চলে যেতে পারে। সেভাবেই হোক রায়ানকে এবস থামাতে হবে। এই কেসটা দিনকে দিন অনেক বড় ঝামেলার সৃষ্টি করছে। হঠাৎ করেই একই কারনে মৃত্যুর সংখ্যা এতো বেরে যাওয়ায় এই বিষয় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কথাবার্তা চলছে। তবে মানুষ সবকিছুর জন্য ২৩ সংখ্যাকেই ভয় পাচ্ছে। কিন্তু রায়ান জানে এখানে ২৩ এর কোন অবদানই নেই। সবকিছুই ওই লোকের কাজ। রায়ান ভাবছে কেন ওই লোক হঠাৎ করেই প্রতি মাসের যায়গায় প্রতি দিন মানুষ মারার সিদ্ধান্ত নিলো? ২৩ সংখ্যার এই ঝামেলা শুরু হয়েছে আরও ১১ বছর আগে থেকে। তাই রায়ান ভেবেছিলো হয়তো লোকটার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হবে। কিন্তু এখন রায়ান প্রায় সিউর যে, লোকটার বয়স ৪৫ এর বেশি হবে। কেননা লোকটার হয়তো ধারনা সে আর বেশিদিন বাঁচবে না বা মানুষ মারার জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম থাকবে না। তাই সে এখন বেশি বেশি মানুষ মারা শুরু করেছে। যেন সে মরার আগে অনেক বেকার মানুষদের শেষ করে দিয়ে যেতে পারে। রায়ানের কাছে এখন লোকটিকে ধরা আরও একটু সোজা হয়ে গেলো। আর সেইটা লোকটাই করে দিলো। তবে রায়ান বেশ বুঝছে, লোকটাও কম চতুর না। গত ১১ বছরেও কেও টাকে ধরতে তে পারেনি।